লাফিয়ে বাড়ছে মৃ*তের সংখ্যা, নিহ*ত কমপক্ষে ১২৬

চীনের তিব্বতের প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৯৫ জনে পৌঁছেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে। প্রথমে নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গলেও পরে তা বেড়ে ৩২, এরপর বেড়ে ৫৩ এবং সর্বশেষ ১২৬ জনে এসে ঠেকেছে।

সিনহুয়া বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ‘স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা পর্যন্ত মোট ৯৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং আরো ১৩০ জন আহত হয়েছে। এক হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিনহুয়া। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে চারশ কিলোমিটার দূরে ডাংরিতে মাউন্ট এভারেস্টের উত্তর দিকে।

ভূমিকম্প আঘাত হানার পর স্থানীয় একজন ফোনে এএফপিকে বলেছেন, ‘এখানে ঘরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিনিত হয়েছে।

ভূমিকম্পে… প্রচুর বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়েছে।‘ পরিস্থিতিটিকে ‘খুব গুরুতর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি। অ্যাম্বুলেন্সগুলো সারা দিন লোকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুসারে, আজ মঙ্গলবার বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।

যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১। তবে চায়না ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টার (সিইএনসি) অনুসারে, ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। চীনের প্রত্যন্ত তিব্বত অঞ্চলে এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পে অনেক ভবন ধসে পড়েছে বলে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে।

প্রতিবেশী নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু এবং ভারতের কিছু অংশেও এ কম্পন অনুভূত হয়। সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ‘মঙ্গলবার সকাল ৯টা ০৫ মিনিটে জিজাং (তিব্বত) স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জিগাজে শহরের নেপালের সীমান্তের কাছে ডিংরি কাউন্টিতে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।

তারা আরো জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৬২ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এক হাজারের বেশি বাড়ি বিভিন্ন মাত্রার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ডিংরি কাউন্টি এবং এর আশপাশের এলাকায় খুব শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকেন্দ্রের কাছাকাছি অনেক ভবন ধসে পড়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী সিসিটিভির প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, দেয়াল ভেঙে পড়েছে এবং ঘর-বাড়িগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হাঁটছেন। কেউ কেউ স্থানীয়দের গরম রাখার জন্য মোটা কম্বল দিচ্ছেন।

সিসিটিভির কিছু ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার সময় মানুষ ভয়ে দৌড়াচ্ছে এবং সবকিছু কাঁপছে।

তিব্বতের ভূমিকম্প ব্যুরো আজ মঙ্গলবার বিবিসিকে জানায়, তারা ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারছে না। তারা এখনো নিহতের সংখ্যা যাচাই করছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং পূর্ণ মাত্রায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সঠিকভাবে পুনর্বাসন এবং শীতকালে তাদের নিরাপত্তা ও উষ্ণতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।

সিনহুয়া জানিয়েছে, ‘ভূমিকম্পের প্রভাব মূল্যায়ন করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কাউন্টির বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।’ ডিংরিতে তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৭.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং আজ সন্ধ্যায় মাইনাস ১৮-এ নেমে যাবে বলে চীনা আবহাওয়া প্রশাসন আশঙ্কা করছে।

চীনা বিমানবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ড্রোন পাঠিয়েছে। অঞ্চলটি এভারেস্টের পাদদেশে অবস্থিত। সেখানে তাপমাত্রা অনেক কম। সেখানে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উঁচু পাহাড়ি এলাকার জন্য তাঁবু, কম্বল এবং হিমশীতল এলাকার জন্য ত্রাণ সহায়তা প্রেরণ করা হচ্ছে।

যদিও এই অঞ্চলে ভূমিকম্প সাধারণ ঘটনা, তবে মঙ্গলবারের ভূমিকম্পটি গত পাঁচ বছরে ২০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল বলে সিউএনসি জানিয়েছে। এদিকে, কাঠমাণ্ডুর পাশাপাশি এভারেস্টের নিকটবর্তী উচ্চ পর্বতমালায় নেপালের লোবুচের আশপাশের অঞ্চলগুলো কম্পন এবং আফটারশকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

এভারেস্টের কাছাকাছি অবস্থিত নেপালের নামচে অঞ্চলের সরকারি কর্মকর্তা জগৎ প্রসাদ ভুসাল বলেছেন, ‘এখানেও বেশ প্রবলভাবে কম্পন অনুভূত হয়েছে, সবাই জেগে আছে।’ তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। নেপালি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র ঋষি রাম তিওয়ারি বলেছেন, ‘ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠার পর নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।’

সূত্র : এএফপি

About admin

Check Also

চরম দু:সংবাদ, ভিসা বন্ধ করল….

শুক্রবার আইআরসিসি জানায়, ২০২৪ সালের পিজিপি প্রোগ্রামের আওতায় পূর্বে জমা দেওয়া আবেদনগুলোই কেবল প্রক্রিয়াকরণে রাখা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *