পরবর্তী বিয়ে নিয়ে যা বললেন তনি

সম্প্রতি আলোচিত নারী উদ্যোক্তা ও ইনফ্লুয়েন্সার রোবাইয়াত ফাতিমা তনির স্বামী শাহাদাৎ হোসাইন মারা গেছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে চলছিল নানা আলোচনা। এবার নেটিজেনদের উদ্দেশে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন তনি।

গতকাল শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রোবাইয়াত ফাতিমা তনি ওই পোস্টের সঙ্গে স্বামীর হাসপাতালের ছবি জুড়ে দিয়ে লেখেন, ‘মিশন সাকসেসফুল- এই ছবিটা পোস্ট করে যারা এইসব লিখেছেন।

আমি জানতে চাই মিশন সাকসেসফুল কি! একটা প্রমাণ দেখাতে পারলে ফেসবুকে আর চেহারা দেখাব না।’

তনিতিনি আরো লেখেন, ‘যারা আমার নেক্সট বিয়ে নিয়ে চিন্তা করে মরে যাচ্ছেন তাদেরকে বলতে চাই, আমাকে নিয়ে যত ভাবেন যদি নিজেকে নিয়ে যদি এর ৫০% ও ভাবতেন তাহলে আমাকে নিয়ে ভাবার সময় পেতেন না। আমি অনেক ভাগ্যবতী এমন একজন মানুষকে আমার হাসব্যান্ড হিসেবে পেয়েছি যার ভালোবাসা আমাকে সারাজীবন বাঁচিয়ে রাখবে ইনশাল্লাহ। আমার জীবন চলার জন্য আল্লাহর রহমত আর সাহায্য ছাড়া অন্য কারো প্রয়োজন নেই, আমি যথেষ্ট কেপাবল আলহামদুলিল্লাহ।

ছেলে-মেয়ে দুইটাকে আমার হাসব্যান্ডের আদর্শে বড় করতে চাই, আমি বিশ্বাস করি আমার হাসব্যান্ড পরপারে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। তাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাদাদ রহমানের ওয়াইফ এই পরিচয়টা প্রাউডলি বহন করতে চাই। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী। নিজের ওপর অগাধ বিশ্বাস আর অনেক কন্ট্রোল আছে আমার, তাই আমাকে নিয়ে বেকার চিন্তা করা থামান।

হিংসুটে লোকদের কাজ হচ্ছে অন্যের পেছনে পরে থাকা উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা লেখেন, ‘আমার হাসব্যান্ড ১০১ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল। প্রথমদিকে আমি বেশিরভাগ সময় ব্যাংককে থাকতাম, কিন্তু হাসপাতালে প্রতিদিন ১০-১২ লক্ষ টাকা বিল দিতে গিয়ে আমার অর্থনৈতিক অবস্থান কি হতে পারে এটা যেকোনো শিক্ষিত মানুষকে মনে হয় না বোঝাতে হবে। এর পর হসপিটালে আমার হাসব্যান্ডের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা থাকার জন্য স্পেশাল আইসিইউ নার্স আলাদা করে অ্যাপোয়েন্ট করে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ-ব্যাংকক আসা যাওয়া শুরু করি, কারণ আমাকে সবকিছু ঠিক রাখতে হবে। এ ছাড়া এত বড় অংকের বিল মেটানো সম্ভব নয়। এর মধ্যে ফেসবুকে মানুষের নানা রকম উপদেশ, ভুয়া নিউজ, ট্রল এইসব কিছু তো আছেই—অনেকে আমাকে ডিরেক্টলি পর্যন্ত বলছে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন! কত বড় অসভ্য হলে এই সব তারা করতে/ বলতে পারছে!’

ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ আমি সানভী এবং সারফারাজকে ব্যাংকক নিয়ে যান জানিয়ে তনি লেখেন, ‘তারা যেন বছরের প্রথম দিনটা তাদের ড্যাডির সঙ্গে কাটাতে পারে।

সকালে উঠে রেডি হয়ে প্রথমে হাসপাতালে তাদের ড্যাডিকে দেখে ওদের ঘুরতে নিয়ে যাই। আমি যখন একা ব্যাংককে একা থাকতাম তখন বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকতাম, কিন্তু বাচ্চাদের তো সারাক্ষণ আইসিইউতে রাখা যায় না, আবার ওদের সামনে কান্নাও করা যায় না। ওরা অনেক ছোট আর সারফারাজ তো কিছুই বুঝে না—ওদেরকে সব কিছু নরমাল বোঝাতে হয়। এ ছাড়া আমি যে প্রফেশনে আছি আমাকে অনেক প্রেজেন্টেবল হয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে হয়, শুধুমাত্র লিপস্টিক দেওয়া একটা ছবি দেখে এত কিছু জাজ করে ফেললেন!’

আলোচিত এই নারী উদ্যোক্তা আরো লেখেন, ‘আপনাদের কোনো ধারণা আছে ব্যাংককে ট্রিটমেন্ট করতে কত টাকা খরচ হয়! আর মেন্টালি ফিজিক্যালি কতটা স্ট্রাগল করতে হয়েছে আমাকে! আজকে ঢাকা তো কালকে ব্যাংকক, যেটা অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো, হাসব্যান্ড, হাসপাতেলের বিল, বাচ্চা, পরিবার, বিজনেস—সব টেনশন আমাকে একা নিতে হয়েছে, আপনাদেরকে নয়। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন তো আপনার হাসব্যান্ড বা ওয়াইফ কোমাতে চলে গেলে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করে কোনো মিরাক্কেলের আশায় আমার মতো এমন স্টেপ নিতে পারবেন তো! তাও আবার ওয়ার্ল্ডের বেস্ট হসপিটাল গুলোর একটাতে!’

অঢেল টাকা থাকলেও অনেকে এত সাহস দেখায় না, মানুষটার ভালোবাসার গভীরতা এত বেশি ছিল প্রয়োজনে নিজের জীবনটাই দিতে পারতাম উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘সেই শুরু থেকেই সামাজিক মাধ্যমে অনেক যুদ্ধ করে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হয়েছে। আমি লোভী এই কথা বলে হয়ত সারাজীবন কিছু অকর্মা লোক নিজের মনের জ্বালায় নিজেই জ্বলে পুড়ে মরবে, আমাকে আটকাতে পারেনি আর পারবেও না ইনশাল্লাহ। হয়ত আগামী ১/২ দিনের মধ্যে আমাকে কাজ শুরু করতে হবে। কিছু ফালতু মানুষ নিজের মনের বিষ মেটাতে অনেক কথা বলবে অনেক ফতোয়া দেবে, কিন্তু আমার এতে কিছুই আসে যায় না। বিগত বছরে আমি যে পরিমাণ ধাক্কা খেয়েছি, এখন সব সামলে উঠতে হবে, অনেক অনেক রেসপন্সিবিলিটি আমার, শত শত মানুষের দায়িত্ব আমার। আমার ছেলে-মেয়ে, মা, ভাই-বোন সবাইকে ভালো রাখতে হবে, আল্লাহ জানেন আমি কি কি করেছি, আর আমার মনের মধ্যে কি চলছে, আর যারা এইসব বলে তারা আমার সামনে এসে একটা কথা বলার যোগ্যতা রাখে না, অথবা নিজের মনে মনে নিজের থেকে আমাকে অনেক বড় কিছু মনে করে, তাই এত গভীরভাবে আমাকে ফলো করে।

আমার প্রফেশন, আমার পোশাক, আমার লাইফস্টাইল সর্বোপরি আমার কর্মের জবাব আমি আল্লাহকে দেবো, ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে হ্যারাসমেন্ট করা বন্ধ করেন, আর আমাকে কিছু বলতে ইচ্ছে করলে সাহস করে আমার সামনে আইসেন হাতে কলমে বুঝিয়ে দেবো। আমি ভণ্ডামি কর‍তে পারি না, আজকে বোরখা, কালকে হিজাব তার পরদিন ওয়েস্টার্ন এইসব আমি পারি না, বাস্তব জীবনে আমি যেমন ক্যামেরার সামনেও তাই। আর সব মানুষকে খুশি করা আমার কাজ না, আমি যেমন অমনি যাদের আমাকে ভালো লাগে আলহামদুলিল্লাহ, যাদের লাগে না তারা আমাকে বা আমার পেইজ আনফলো বা ব্লক করে দিতে পারেন, আপনাদের কেউ দাওয়াত দেয়নি আমাকে দেখার জন্য, দেখবেন আবার হিংসাও করবেন, আমার তো কিছু করার নেই।

আমার জীবনটা আয়নার মতো পরিষ্কার, আমি যেমন অমনি থাকব ইনশাল্লাহ। জীবনে আমার খারাপ সময় গুলো আমাকেই পার কর‍তে হয়েছে, তাই আমি মানসিকভাবে অসম্ভব শক্তিশালী একজন মানুষ, সময় সবকিছুর উচিত জবাব দিয়ে দেবে ইনশাল্লাহ। জীবন অনেক ছোট, আল্লার রহমতে ছোট্ট এই জীবনে অনেক ভালোবাসার মানুষ, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছি, আপনাদের দোয়ায় আমার জীবন চলে যাবে ইনশাল্লাহ।’

তনির দ্বিতীয় স্বামী শাহাদাৎ হোসাইন। প্রথম স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ভালোবেসে বিয়ে করেন শাহাদাৎকে। গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে স্বামীর মৃত্যুর কথা জানিয়ে তনি লেখেন, ‘সে আর নাই। ব্যাংকক সময় রাত ৩.০৩ মিনিটে আমাকে সারাজীবনের মতো একা করে চলে গেছে।’

About admin

Check Also

চরম দু:সংবাদ, ভিসা বন্ধ করল….

শুক্রবার আইআরসিসি জানায়, ২০২৪ সালের পিজিপি প্রোগ্রামের আওতায় পূর্বে জমা দেওয়া আবেদনগুলোই কেবল প্রক্রিয়াকরণে রাখা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *